সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বল অবস্থা দেখে মনে হতে পারে যে পড়াশোনার গুরুত্ব দিন দিন কমছে। উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেখানে পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত, সেখানে এখনো অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। কেননা বিদেশে পড়াশোনা করা মানে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জনের একটি সম্ভাবনাময় পথ।
এইচএসসি পাশের পর অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন। অনেকে অনার্স বা মাস্টার্স শেষে বিদেশে যাওয়ার চিন্তা করলেও, এইচএসসি পাশের পরই বিদেশে যাওয়ার উপযুক্ত সময় ধরা হয়। তবে এজন্য কিছু প্রস্তুতি প্রয়োজন যা আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে এবং কম বয়সেই বিদেশে উচ্চশিক্ষার পথে যেতে সহায়ক হবে।
### প্রস্তুতি নিতে যা করতে হবে:
বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভাষা দক্ষতা প্রমাণ করা। আইইএলটিএস, টোফেল, স্যাট বা জিআরই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে আপনি এই দক্ষতা প্রমাণ করতে পারবেন। প্রতিটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এসব পরীক্ষার স্কোরের প্রয়োজন হয়। যেমন, ইউরোপ, যুক্তরাজ্য বা অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএসে ৬-৭ ব্যান্ড স্কোর প্রয়োজন।
আপনার পাসপোর্ট যেন প্রস্তুত থাকে সেটা নিশ্চিত করুন। বিদেশে পড়াশোনার আবেদন করার জন্য পাসপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভালো রেজাল্টের মাধ্যমে স্কলারশিপ বা ভর্তি নিশ্চিত করা সহজ হয়। তাই আপনাকে অবশ্যই এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিদেশে কোথায় পড়তে যেতে চান তা নির্ধারণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নির্ভর করবে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং পরিবারের মতামতের উপর।
বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে গেলে একাডেমিক রাইটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। SOP (Statement of Purpose) বা রিকমেন্ডেশন লেটার লেখার প্র্যাকটিস করুন।
**৬. সঠিক ডকুমেন্ট প্রস্তুতি:**
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যেমন একাডেমিক সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট, এবং কোর্সের তথ্য প্রস্তুত করে রাখুন।
বিভিন্ন দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে স্কলারশিপের তথ্য খুঁজে বের করুন। ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, রাশিয়ান, এবং অন্যান্য সরকারিভাবে প্রদত্ত স্কলারশিপগুলোতে আবেদন করতে পারেন।
### বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুবিধা:
- **আত্মনির্ভরশীলতা:** আপনি নিজে সমস্ত কাজ করার সুযোগ পাবেন।
- **আধুনিক শিক্ষা:** বিশ্বের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে পরিচিত হওয়া।
- **পার্ট-টাইম চাকরি:** অধিকাংশ দেশেই শিক্ষার্থীদের জন্য পার্ট-টাইম কাজের সুযোগ থাকে।
- **ক্যারিয়ার উন্নতি:** বিদেশি ডিগ্রি দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করে।
সেরা কিছু স্কলারশিপের তালিকা
(১) ডাড(DAAD) স্কলারশিপ।
(২) ফুলব্রাইট স্কলারশিপ।
(৩) শেভেনিং স্কলারশিপ।
(৪) কমনওয়েলথ মাস্টার্স স্কলারশিপ।
(৫) ইরাসমুস মুন্ডুস স্কলারশিপ।
(৬) প্রিমর্স্কা বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ।
(৭) লুব্লিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ।
(৮) বিলাটেরাল স্কলারশিপ।
(৯) জিইএ কলেজ স্কলারশিপ।
(১০) ইউরোপীয়ান কংগ্রেস অব ম্যাথমেটিক্যাল স্কলারশিপ।
(১১) জোজেফ স্টেফান ইনস্টিটিউট পিএইচডি ফেলোশিপ।
(১২) আইইডিসি ব্লেড স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট স্কলারশিপ।
(১৩) স্লোভেনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন স্কলারশিপ।
বিশ্বসেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম:
০১. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
০২. ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি।
০৩. স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
০৪. ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি ক্যালিফোর্নিয়া।
০৫.ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন সিয়াটেল।
০৬. কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
০৭.অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
০৮. লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ।
০৯. ইটিএইচ জুরিখ।
১০. ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন ।
১১. সুইস (Swiss) ফেডারেল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি।
১২. ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো
বিদেশে উচ্চশিক্ষার সঠিক প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা করলে আপনি ভবিষ্যতে একটি নিশ্চিত এবং সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
0 Comments